শনিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৭

জুলাই থেকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ চালুর

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে ঢাকাসহ অন্য বিভাগীয় শহরগুলোর মতো গাজীপুরে মেট্রোপলিটন পুলিশ গঠন করা হচ্ছে। আগামী জুলাই থেকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)’র কার্যক্রম শুরু করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি রয়েছে। ২৮ এপ্রিল শুক্রবার দৈনিক মানবজমিন- পত্রিকায় প্রকাশিত ‘জুলাই থেকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ চালুর প্রস্তুতি’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিএমপি’র ইউনিট গঠন আইনের খসড়া প্রস্তাবটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কিছু সংশোধনীর পর প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। দেশে বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনায় মেট্রোপলিটন পুলিশ ইউনিট রয়েছে। অনুমোদন পেলে গাজীপুর সপ্তম মেট্রোপলিটন হিসেবে যাত্রা শুরু করবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও গাজীপুর জেলার সাবেক জেলা প্রশাসক মো. নূরুল ইসলাম জানান, আগামী সংসদ অধিবেশনে এর আইনি রূপ দেয়ার জন্য উত্থাপনের প্রস্তুতি রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইতিমধ্যে এই নতুন পুলিশ ইউনিট তৈরির কাগজপত্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর প্রস্তুতির সব কিছুই শেষ হয়েছে। এখন যে কোন সময় কেবিনেটে পাঠানো হবে। আর সংসদ অধিবেশনে বিল পাস হয়ে গেলেই জিএমপি’র কার্যক্রম শুরু করতে আর কোন বাধা থাকবে না। ইতিমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। তিনি বলেন, গত ৭ই ডিসেম্বর মন্ত্রিসভায় জিএমপি’র প্রস্তাব অনুমোদনের পর তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। ওই কমিটি গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে বৈঠক করে জিএমপি গঠনের প্রস্তাব চূড়ান্ত করে। আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভেটিং শেষে সেটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে অনুমোদন হলেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে যাত্রা শুরু করবে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ইউনিট। জিএমপিতে বর্তমানে গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় থাকা জয়দেবপুর ও টঙ্গী থানা এবং কোনাবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ি, ভোগড়া ও পূবাইল পুলিশ ক্যাম্প এলাকা নিয়ে মোট ১০টি থানা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত জিএমপি’র নতুন থানাগুলোর নাম হবে-জয়দেবপুর থানা, সালনা থানা, চৌরাস্তা থানা, কোনাবাড়ী থানা, মৌচাক থানা, কাশিমপুর থানা, বোর্ডবাজার থানা, মীরেরবাজার থানা, টঙ্গী পূর্ব-থানা ও টঙ্গী পশ্চিম থানা। গাজীপুর মেট্রোপলিটনের প্রধান উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি)সহ বিভিন্ন পদমর্যাদার মোট আট হাজার ২শ’ ২৬ জনবলের প্রস্তাব করা হয়েছে। গাড়ি চাওয়া হয়েছে ১ হাজার ২শ’ ১৭টি। এর মধ্যে ২৬৫টি ক্যাডার পদ। এর মধ্যে ডিআইজি পদবির একজন দায়িত্ব পালন করবেন কমিশনার হিসেবে। তিনজন অতিরিক্ত ডিআইজি, এসপি পদ মর্যাদার ২১ জন ডিসি (ডেপুটি পুলিশ কমিশনার), এডিসি ৪৯ জন ও এএসপি ১৯১ জনের পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন হওয়ার পরও গাজীপুর জেলা পুলিশ বিদ্যমান থাকবে। এতে বছরে খরচ হবে ১শ’ ৮৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। বর্তমানে গাজীপুর জেলায় পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার প্রায় ১ হাজার ২শ’ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য রয়েছেন। গাজীপুর ও টঙ্গী পৌরসভা এলাকার ৩২৯ দশমিক ৯০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি গঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন যাত্রা করে। গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় বেশ কয়েকটি কেন্দ্রীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার মধ্যে দু’টি গবেষণা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইইউটি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্‌রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট, সমরাস্ত্র কারখানা, সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (টাকশাল), বাংলাদেশ কৃষি ও ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট, টেলিযোগাযোগ স্টাফ কলেজ, কিশোর ও কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্র, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার, জেলা কারাগার, টেলিফোন শিল্প সংস্থা, দু’টি রেলওয়ে জংশন, তিনটি রেলওয়ে স্টেশন, একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ, তিনটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও কয়েকটি সরকারি হাসপাতাল। এছাড়া অসংখ্য গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিসহ বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বর্তমানে এই মহানগরের জনসংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ। এছাড়া মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার টঙ্গীতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।