বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৬

হাইকোট বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের ক্ষেত্রে ৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন

হাইকোট বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের ক্ষেত্রে ৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন


বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের আওতায় আনার ক্ষেত্রে ৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোট। বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি এ কে এম শহিদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈতবেঞ্চের পুর্ণাঙ্গ রায়ে জাতীয়করণের জন্য অনুসরণীয় এসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ইংরেজিতে ২০ পৃষ্ঠার রায়ে “শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ নীতিমালা” শিরোনামের অংশটি বাংলায় লেখা হয়। ওই রায়ে বলা হয়, “ভবিষ্যতে কোন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করতে হলে নিন্মোক্ত নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।” গুলশানের কালাচাঁদপুর স্কুল এন্ড কলেজ জাতীয়করণ সংক্রান্ত ওই মামলাটি ওয়াকিল উদ্দিন ও অন্যান্য বনাম রাষ্ট্র হিসেবে বহুল আলোচিত।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণ করা হলেঃ-
১.উক্ত প্রতিষ্ঠানের শুধু সে সকল কর্মরত শিক্ষকগণকে সরকারী চাকরিতে আত্মীকরণ করা হবে যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বি সি এস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে নিযুক্তির জন্য নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতার অনুরূপ।
২. আত্মীকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে প্রথমে এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ করা হবে এবং পরবর্তীতে সরকারী কর্ম-কমিশন কর্তৃক তার উপযুক্ততা যাচাইয়ের পর কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়মিত নিয়োগদান করা হবে।
৩.মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও যে সকল কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শিক্ষাগত যোগতা বিধি অনুসারে সরকারি বিদ্যালয়ে নিযুক্তির জন্য নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতার অনুরূপ, শুধু তাদেরকেই উপযুক্ততা যাচাইয়ের পর আত্মীকরণ করা হবে। তদানুযায়ী আত্মীকরণ বিধিমালা সংশোধন করা হবে।
৪. কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি অন্তত: দশ বৎসর নিয়মিত স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত না হয়ে থাকে সে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের জন্য বিবেচিত হইবে না।
৫.জাতীয়করণের জন্য এলাকার প্রাধিকার নির্ধারণ, জনসংখ্যা ও তথায় বিদ্যমান শিক্ষার সুযোগ পর্যালোচনার ভিত্তিতে করতে হবে। জাতীয়করণের জন্য প্রস্তাবিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে পূর্ববর্তী পাঁচ বৎসরের পাবলিক পরীক্ষায় উৎকৃষ্ট ফলাফল অর্জনকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণের জন্য বিবেচনা করা হবে।
৬.যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র/ছাত্রী পূর্ববর্তী পাঁচ বৎসরের মধ্যে পরীক্ষায় দূর্নীতির জন্য বহিস্কৃত হয়েছে সে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের জন্য বিবেচিত হবে না।
৭.জাতীয়করণ করা হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ন্যূনতম ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে; জাতীয়করণের পর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আত্মীকৃত শিক্ষক/শিক্ষিকাগণ ন্যূনতম ৫ (পাঁচ) বৎসর উক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করতে বাধ্য থাকবেন।
৮.মাধ্যমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে সুযোগ বৃদ্ধি ও গুণগত উৎকর্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি উপজেলায় অন্তত: একটি করে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সরকারি নীতি হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। বর্তমানে যে সকল উপজেলায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই, শুধু সে সকল উপজেলার বিদ্যালয় কোনো বেসরকারি বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ অথবা নতুন স্কুল স্থাপনের মাধ্যমে এ নীতি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। উপজেলার এ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়টিকে একটি মডেল বিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ, যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক/শিক্ষিকা নিয়োগ ইত্যাদির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এর ফলশ্রুতিতে উপজেলায় অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুপ্রেরণা লাভ করবে এবং এদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি করবে। সরকারি সম্পদের সীমাবদ্ধতার পরিপ্রেক্ষিতে দশ বৎসর মেয়াদের সময়সীমা নির্ধারণ করে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন